শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন

২৮ বছর আত্মগোপনে থাকার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

২৮ বছর আত্মগোপনে থাকার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

নিজস্ব সংবাদদাতা:

প্রায় ২৮ বছর আত্মগোপনে থাকার পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শনিবার ( ১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর জেলার গাছা থানা এলাকা থেকে আ. রাজ্জাক ওরফে জাকির হোসেনকে (৬০) গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল।

রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সম্মেলন হয়। সেখানে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দন আহমেদ জানান, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি সে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার হাপুনিয়া গ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতো। অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হতো। একপর্যায়ে তার স্ত্রী তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান। স্ত্রী-সন্তান চলে যাওয়ার পর গ্রামের বখাটে যুবকদের সঙ্গে নিয়ে সে এলাকায় চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম চালাতো।

তিনি বলেন, আসামি আ. রাজ্জাক তার প্রতিবেশীর কিশোরী মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। রাজি না হলে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এবং হত্যার হুমকি দেয়। পরে ১৯৯৫ সালের ১২ এপ্রিল আ. রাজ্জাক তার বাড়িতে বসে আ. আজিজ, আলাল, আব্দুর রব, শাহিদ মিয়া, রহমান এবং হান্নানসহ বেশ কয়েকজন ওই কিশোরীকে উঠিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এরপর ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যার পর শৌচাগারে যাওয়ার জন্য ওই কিশোরী বের হলে তার মুখে গামছা পেঁচিয়ে অপহরণ করে পাউরা গ্রামের একটি হাওরে নিয়ে যায় তারা। সেখানে ১২ জন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। ভিকটিম চিৎকারের চেষ্টা করলে আ. রাজ্জাক তার গলা টিপে ধরে এবং অন্যান্য সহযোগীরাও তাকে মারধর করতে থাকে। মেয়েটি মারা গেলে তাকে বস্তায় ভরে হাওরের একটি ধান ক্ষেতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায় ধর্ষকরা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা আ. রাজ্জাকসহ কয়েকজনের নামে একটি গুমের মামলা করেন। ঘটনার ছয় দিন পর ১৯ এপ্রিল ভিকটিমের লাশটি পাউরা হাওর থেকে উদ্ধার করা হয়। পরিবারের সদস্যরা লাশ চিহ্নিত করেন। এরপর কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় আ. রাজ্জাককে প্রধান আসামি করে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার মামলা দায়ের করে।

এ মামলার তদন্তে পরবর্তীতে আরও দুই জনের সম্পৃক্ততা বের হয়ে আসে। ২০০২ সালে আদালত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে আ. রাজ্জাকসহ পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর সাত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ১২ জন আসামির মধ্যে দুই জন জেল হাজতে মারা যায়। আট জন বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। একজন পলাতক রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদ আ. রাজ্জাক র‌্যাবকে জানায়, তার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এবং সে মূলত কৃষিকাজ করতো। ১৯৯৫ সালের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পরপরই সে নিজ এলাকা নেত্রকোনা থেকে পালিয়ে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় চলে আসে। কিছুদিন রিকশাচালক হিসেবে কাজ করে। এখান থেকে পালিয়ে উত্তরায় আসে। সেখানে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে ছয় বছর থাকার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে সে আবার স্থান পরিবর্তন করে গাজীপুরের গাছা এলাকায় গা-ঢাকা দেয়। সেখানে গিয়ে সে নাম পরিবর্তন করে জাকির হোসেন ছদ্মনাম দিয়ে এনআইডি ইস্যু করে এবং দাড়ি ও চুল বড় রেখে নতুন পরিচয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে।

এসময় সে দুইটি সিএনজি কিনে একটি নিজে চালাতো এবং অপরটি ভাড়া দিয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদে সে মাদকের চালানে যুক্ত থাকার কথাও জানায়। এভাবে প্রায় ২৮ বছর আত্মগোপনে ছিল সে।

র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আ. রাজ্জাকের ছেলে কিছুদিন আগে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বিয়ে করে। মামলার পুরনো ফাইলপত্র হাতে পাওয়ার পর র‌্যাব কলমাকান্দা থেকে সেই ছেলের গতিবিধি নজরে রাখতে শুরু করে। এরপরই ছেলের সূত্র ধরে আ. রাজ্জাকের খোঁজ পায় র‌্যাব।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |